আবু তাহের তারেক ও মুহাম্মাদ রাকীবুল ইসলাম
‘আম্মা নদী’র পোয়েটিক তিলাওয়াত
মুহাম্মাদ রাকীবুল ইসলামপ্রকাশিত : অক্টোবর ২১, ২০২০
আম্মা নদী
সবকিছু থাকি বার অইছি
বন্ধুত্ব নাশ অইল
পিরিত নাশ অইল
চুদাচুদিও ট্যাশ নায়
ভাই বইন ছাড়ছি
তান তান লগে কথা কওয়া ছাড়া দিন রাইত যায়
অনেক সমুন্দর গাং খাল হাকম পারইছি
আম্মারে পার অইতাম পাররাম না
আম্মা থাকি বারইছি
কিন্তুক তানরে ছাড়াইয়া যাইতাম পাররাম কই
বিষ্টি থামলে
বিষ্টি থামলে
বিষ্টিরা থামে না
মেগ হই
আছমানের সংসারে
দৌড়ে
জমজমের পানি হই
টিউওকলের যাতার ভিত্রে খনে
ঢুকে
বিষ্টিদের সরল সিধা লাইফ
মাদরেসা
আমি মাদরেসা ভালা ফাই
তলা আল বাদরু আলাইনার শান হুনি
মুহাম্মদ আইরা
লগে সাহাবী আবু বকর
মদীনার বালুত ফাও রাখল টায়ার্ড উটনি
শাদা রুমাল উড়াইয়া খবুতর ছাও গুইন্তে গান গার
ওয়াজাবাশ শুকরু আলাইনা মা দা`আ লিল্লাহি দা
দেশো যাওয়া
দেশো যাওয়া এখটা সংগ্রামর নাম
এরে দেশর বায় যাওয়া খওয়া যায়
দেশো গেলে দেশরে ফাইন!
দেশর বায় যাওয়া মানে আফনার বায় যাওয়া
আফনার খোঁজে
লাউ কিত্তা হইরো খেত ফারইয়া
জেরুজালেম আরাকান অইয়া
আপনার বাংলাত আমি জামাত শিবির
ছাগল দাঁড়ি
বকরি টুব্বি
ঘাস খাই না
ঘাসর তলাত
থাকি দেশর তলাত
শাপলাত মেগ ঝরছিল
কসম আল্লার
তাইন বানাইলা
দলা বান্ধা লউ
কসম শাপলার
যেনো লাল মেগ ঝরছিল
কবিতার বিষয়াশয় আমাদের এই অক্তে এসে বেশিরভাগই অনুমিত। এর প্রবাহের গতিপথ আন্দাজে, সহজেই এঁকে ফেলতে পারে একটা চিত্রপট, সিম্বল আর ব্যাকগ্রাউন্ড। কিন্তু আম্মারে নিয়ে কবিতায় সেটা কঠিন। যথেষ্ট সংযমের দীক্ষা দিতে হয় নিজের নিজেকে। আবু তাহের তারেকের `আম্মা নদী`র সুর আর ইমেজ মাথায় গেঁথে আছে এখনো। যেইটা সকল অর্থেই কোনো কিছু বুঝাবুঝির চেষ্টার বাইরে একটা লিরিক্যাল শান্তি দিয়ে যাচ্ছে। মানে, আরো অনেকবার সেই `আম্মা নদী`র পাড় ঘেঁষে `সন্তানদের` পাড়ি দিতে হবে প্রভূত সংগ্রাম আর `অনুমিত` পোয়েটিক টোন।
বুকিশ থেকে প্রকাশিত `আম্মা নদীর` আম্মাকে আমি ভূগোলের বাঁধাধরা মানচিত্রে আটকে রেখে পাঠ করতে পারিনি। কখনো এই আম্মার সমার্থক দেশ-রাষ্ট্র, কখনো `মদীনা`, কখনো চির অমলিন শৈশব আর কখনো প্রবাসে আটকা পড়া নিঃশ্বাস ও স্মৃতির স্ফূরণ। সীমাবদ্ধতায় আটকে থাকতে পারে নাই আম্মা নদী`র প্রবাহ। যদ্দুর এর প্রবাহ নজরে পড়েছে সেটা আল্লা, আরশ... এই স্পন্দনগুলোকে অনুভব করার কোশিশ করেছে।
দেশর বায় যাওয়া মানে আফনার বায় যাওয়া
আফনার খোঁজে
লাউ কিত্তা হইরো খেত ফারইয়া
জেরুজালেম আরাকান অইয়া (আম্মা নদী)
আবু তাহের তারেকের কবিতার যেই বৈশিষ্ট্যের সাথে আমি পরিচিত তাহলো, তার ক্রিটিকের সংযুক্তি পোয়েট্রির সাথে। যেটা অনেক ব্যাখ্যার সরল এবং সহজ অনুরণন জাগাবে পাঠকের দীলে। যার জন্য ক্রিটিক পাঠটা আবশ্যক না। তবে এর দ্বারা আম্মা নদী`র ভিন্ন ভাব-তরঙ্গে অবগাহনের সুযোগ মিলবে পাঠকের।
তলা আল বাদরু আলাইনার শান হুনি, শাপলাত মেঘ ঝরছিল, আপনার বাংলাত আমি জামাত-শিবির... এইসব তারেকের কবিতার সিগনেচার। যা এই সময়ের কবিতাগুলোতে অপ্রতুল। হিযরত, লড়াই, দরদ, মজলুমের প্রতি তারেকের কবিতায় দয়ার নজরকে স্পষ্ট করেছে। মানুষের অধিকারের পক্ষে `আম্মা নদী`র আপোষহীন অবস্থানের এই জায়গাটাকে জরুরি ও অবশ্যম্ভাবী মনে হয়েছে আমার কাছে। কেননা কবিত্বের পাশাপাশি বিরাজ করা তারেকের ইন্টেলেকচুয়াল অবস্থান সেসব বিষয়ে সাফ পজিশন রাখে হররোজ।
কবিতার মধ্যেও তো একপ্রকার গদ্য থাকে বা স্টোরি, গল্প। যা অনেক কবিদের কবিতায় স্রেফ শব্দনির্ভর না থেকে আবেগ অভিমুখী স্বচ্ছ চিত্রায়নরূপে হাজির হয়। `আম্মা নদী`তে আবু তাহের তারেক যেই ইমেজের পরীক্ষাগুলো করেছেন তাও শব্দনির্ভর জড় অনুভূতি হিশাবে আছে বলে মনে হয়নি। তাই একবার কোনো একটা কবিতা `আম্মা নদী` থেকে পড়ে নেয়ার পর এর কপি সাথে নিয়ে বয়ে যাওয়া গেছে অনেক দূর। কপিটা হুবহু না হলেও...
আবু তাহের তারেকের `আম্মা নদী` পড়ার কালে কিছু প্রশ্ন বা অভিমত যা মানসপটে প্রচ্ছন্নভাবে রেখে যাচ্ছি `পোয়েটিক নেচার` সম্বন্ধে, তা অক্ষরে খোদাই করছি মূলত।
...যেন মনে হবে শব্দবহুলতায় কাব্যের পরিণতি। কেবল নয়া শব্দ বিযুক্ত হতে থাকবে। আর তা আরোপিত ভাব হয়ে চোখ, হৃদয় ছুঁতে পারার পর মনে হবে কিছু অর্থ (মিনিং) কি পাবার কথা ছিল আদৌ!
তবুও শব্দের ভারের বোঝা পোয়েট্রি কতকাল বয়ে যাবে। পোয়েট্রি টিকে থাকে কেমনে (?), শব্দের মধ্যকার আরোপিত অর্থের ভার হয়ে! কবিতায় বক্তব্য থাকবে না পুরোপুরি, যার যার মতো ভাবার্থ তুলে আনতে হবে কাব্যিক গুলশান-বাগিছা থেকে, এসব কারা শেখায় পাঠককে (?) বা কবিতা থেকে রিডারের শেখার তেমন কিছু কি থাকে আসলে (?), তবে কেন মিনিংয়ের ভার!
`আম্মা নদী` মানে, আবু তাহের তারেকের কবিতার পাঠক হিশাবে এই ইন্টারোগেশনগুলো আমাকে ভাবনার সামনাসামনি পুনরায় দাঁড় করালো। গ্রেইট!
`আম্মা নদী`র জন্য অশেষ শুভকামনা রইলো। এর ব্যাপক পাঠের ফরিয়াদ-আরজি রাখি সকলের তরে। এরই সঙ্গে বইলা রাখি, আবু তাহের তারেকের প্রকাশিত অন্যান্য বই হইলো, ফের্নান্দ পেসোয়ার নির্বাচিত কবিতা (অনুবাদ, ২০১৬) ও আইয়ো রেগো ময়না (কবিতা, ২০১৮)।
লেখক: সোশাল মিডিয়ায় সমাজ-রাজনীতি লইয়া ক্রিটিকাল আলাপ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।