![](https://www.chharpatra.com/media/imgAll/2020May/L20250207175437.jpg)
আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের গদ্য ‘দ্বীনি অঙ্গনের সুশীল’
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৫
আজকাল দ্বীনি অঙ্গনেও কিছু মডারেট, পশ্চিমা আব্বু (আম্রিকা) মার্কা সুশীলের সন্ধান মেলে হরহামেশাই। সুরসুরি মার্কা দাওয়াত দেবে, পশ্চিমা তন্ত্রমন্ত্রের পূজা করবে, এদিকে দ্বীন কায়েমের কথাও বলবে, আবার অভ্যুত্থানের ফসলও ভোগ করবে, পিছনে তাগুতের দালালিও করবে। এ যেন এক কিম্ভুতকিমাকার লেজকাটা শেয়াল মুনাফেক বিন উবাই টাইপের ‘সেয়ানা মানহাজ’।
ক্ষমতার লোভ আর তাগুদের আনুগত্যই যার মৌলিক উসুল। এই উসুলে প্রত্যেক ফ্যাসিস্টের যুগেই সে বা তারা পরিপূর্ণ Safe Zone ও Safe Exit দুটোই হাসিল করতে পারবে। মবক্রেসি বলে-বলে এসব দ্বীনি সুশীল ছাত্রভাই ও তাওহিদি জনতার যে প্রতিবাদগুলোকে পশ্চিমাদের ন্যায় সন্ত্রাসবাদের তকমা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের স্মরণ রাখা উচিত, এই পথ ও পদ্ধতির লড়াইয়ের ফলেই আজ তারা হেলিকপ্টারে চড়ে দ্বীন প্রচারের স্বাধীন মঞ্চগুলো হাসিল করেছে।
এই মাজলুমদের প্রতিবাদ আর বুক চিতিয়ে রক্ত দেয়ার বদৌলতেই আজ দেশ কিছুটা হলেও ফ্যাসিস্ট মুক্ত হয়েছে। পরিপূর্ণ সমাজ বিপ্লব না হলেও অন্তত গণঅভ্যুত্থান তো জরুর হয়েছে। কে ভারতের দালাল, আর কে পশ্চিমের, তাও স্পষ্ট হয়েছে। এমনকি কে মডারেট আর কে তাগুদের দালাল, তাও স্পষ্ট হয়েছে। বলাবাহুল্য, তাদের ঐ মবক্রেসির (সুশীলি ভাষায়) সিঁড়ি বেয়েই আজ আপনারা ক্ষমতায় যাওয়ার বিভোর স্বপ্ন দেখছেন। এমনকি প্রতিটি মিম্বার, স্টেজ কিংবা সেমিনার থেকে আগের চেয়েও কম্ফোর্ট জোনে ওয়াজ করছেন। তাই তাদের পদক্ষেপগুলোকে মব সন্ত্রাস না-বলে জুলুম ও ফ্যাসিস্টবিরোধী প্রতিবাদ বলুন। শব্দ ও দ্বীনের হক্ব আদায় করুন। সাহস করুন। এখন না করলে আর কখন?
হাজার শহিদের রক্তনদীর পরেও যখন ছাত্র ভাইয়েরা চোখের সামনে গাদ্দারি, ফ্যাসিস্টের নব্য সন্ত্রাস আর অভ্যুত্থানের অকাল মৃত্যু দেখবে, তখন তারা চুপ করে বসে থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের উচিত নয় তাদের বিরুদ্ধে দ্বীনের কোনো দলিল সাবিত করা। বরং সত্য স্পষ্ট করার সৎ সাহস না থাকলে অন্তত চুপ থাকার অভ্যাস করুন। এতেও অন্তত নেফাকি থেকে বাঁচার একটা সুরত জারি থাকে।
দেশে আসমানসম জুলুম চলেছে। গুম, খুন, ধর্ষণ, হত্যা, ক্রসফায়ার, সিন্ডিকেট, মিথ্যা মামলা, ভারতের দালালি, দেশবিক্রি, আবরার থেকে শাপলা, অভ্যুত্থান থেকে গাদ্দারি, কী হয়নি এখানে? তাই যে বা যারাই কোনো না-কোনো ভাবে ১৫ বছরের ফেরাউনি মহা জুলুমের শিকার হয়েছে, কিংবা জুলাই অভ্যুত্থানে কিছু না কিছু হারিয়েছে তাদের চোখে আজও ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট! ভেতরের চোখ দিয়ে দেখা শিখুন। এর ওপরে যখন রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতে জালেম নব্য হুংকার ছাড়বে, মাজলুমের অধিকার খর্ব হবে, দালাল পার পেয়ে যাবে, এক তাগুতের জায়গায় আরেক তাগুত ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালাবে, তখন আরও অনেক গল্প হবে, কবিতা হবে, রক্ত হবে, স্লোগান হবে,
আরও অনেক অভ্যুত্থান হবে। আল্লাহ চান তো একদিন পরিপূর্ণ সমাজ বিপ্লবও হবেই হবে, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা আল্ট্রা মর্ডান মানহাযের ‘আহলে সেইফ জোন’ তারা সেই কালিমার পতাকার ‘সুকুন ও শারাফ’ কোনোটাই হাসিল করতে পারবে না! কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। যেভাবে ১৪০০ বছরে কত শত মুভমেন্ট বিলীন হয়ে গেছে। তাই আল্ট্রামডারেট মানহায ও পক্ষপাতিত্বমূলক অবস্থানে না গিয়ে হক্ব আর বাতিল স্পষ্ট করুন।
জনগণ ওলামায়ে কেরামের ও আমাদের মতো তালেবে ইলমদের কাছে এটাই আশা করে। বাকি কাজ তারা নিজেরাই করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। আর আমাদের মতো কিছু গুনাহগার যাদের মহান আল্লাহ কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছেন তাদের আমানতই হলো হক্ব আর বাতিল জাতির সামনে স্পষ্ট করা। কেননা ৩০ বছরে আমারা এমন বলিষ্ঠ, সাহসী প্রজন্ম খুব কমই দেখেছি। হ্যাঁ, তাদের প্রয়োজন সবর, সঠিক দিক-নির্দেশনা, দ্বীনের পরিপূর্ণ বুঝ ও আমল।
ইনশাআল্লাহ, সেটা আমরা তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেব। সবাই সব দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। তবে হক্বের পক্ষে অবস্থান সবাইকেই স্পষ্ট করতে হবে। মূলকথা হলো, ছাত্র ভাইয়েরা যা করেছে তা কস্মিনকালেও উগ্রতা কিংবা মবসন্ত্রাস নয়। বরং তাদের লাশকে সিঁড়ি বানিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ফ্যাসিস্ট দালাল এক্সিট প্রসেসের বিরুদ্ধে গণক্ষোভের সামান্য নমুনা ও বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হক্ব চেনার, বোঝার, স্পষ্ট করার ও হক্বের সাথে থাকার তাওফিক নাসিব করুন। আমিন।
লেখক: ইসলামি চিন্তাবিদ ও বক্তা