আবু তাহের সরফরাজের ছড়াকাহিনি ‘ডাইনি বুড়ির ফুলের বাগান’

প্রকাশিত : আগস্ট ২২, ২০২২

যাচ্ছি, বলে যেই না খোকা
ঘরের থেকে বের হলো
আকাশ ছেয়ে জমাট বেঁধে
ঝড়ের মতো মেঘ এলো।

পেছন থেকে ডাকছে বাবা
আম্মা ডাকেন, বাছারে
হাতের পুতুল শব্দ করে
ভাঙল সে এক আছাড়ে।

একটু পরে বিষটি এলো
চমকে ওঠে বিজলি
পড়ল মনে, বলবে না কেউ
বিষটিতে ক্যান ভিজলি?

বুকের নিচে একটুখানি
ভয়ের মতো কাঁপল
আকাশ ভাঙা বিজলি দেখে
দুহাত মুখে ঢাকল।

খোকার মতো হাঁটছে খোকা
ডাইনে-বাঁয়ে নেই তো চোখ
ফিরব না আর ওই বাড়িতে
বুকের ভেতর চাপছে রোখ।

পথের শেষে একটা বাড়ি
কুঁড়ের মতো দেখতে
সামনে গোলাপ ফুলের বাগান
ইচ্ছে হলো খেলতে।

দৌড়ে এসে দাঁড়ায় খোকা
বাগান ঘেঁষা উঠোনে
বিষটি নামে ইলশেগুড়ি
ছন্দ জাগে গোপনে।

ফুলের গাছে নতুন কুঁড়ি
নতুন রকম গন্ধ
রঙবাহারি বাগানটাতে
সব পাখিরাই অন্ধ।

দেখল খোকা পাখির দশা
জটলা বেঁধে বিষটিতে
কিচির মিচির করছে সবাই
দেখছে না কেউ দৃষ্টিতে।

উড়তে তারা পারছে না কেউ
ঠোকর খেয়ে ফিরছে
গড়গড়িয়ে ডাকতেছে আর
বিষটি এসে ঘিরছে।

পেছন থেকে শুনল খোকা
ঠক ঠকাঠক শব্দ
ঘাড় ফিরিয়ে দেখল যা সে
তাতেই হলো জব্দ।

ভাবল খোকা, এই সেরেছে!
ক্যামন ধারা বুড়িটা?
শনের মতো চুল যে মাথার,
গুনলে হবে কুড়িটা।

নাম কিরে তোর থাকিস কোথায়?
পড়িস কাদের ইশকুলে?
ডাইনি বুড়ির ফুলের বাগান
দেখতে এলি কোন ভুলে?

পেটের ভেতর ধড়ফড়িয়ে
বাজল ভয়ের ডঙ্কা
নেই তো মানুষ এই বাগানে
খোকার মনে শঙ্কা।

ফোঁকলা দাঁতে হাসছে বুড়ি
বিচ্ছিরি তার মুখটা
হঠাৎ খোকা কেঁদেই ফ্যালে
কাঁপছে যে তার বুকটা।

এই বাগানে ফুলের কুঁড়ি
যত্ত আছে, বুঝলে?
রক্ত থেকেই জন্ম সবার
দেখতে পাবে খুঁজলে।
মানুষ পেলে মাংস খেয়ে
রক্ত ছিটোই বাগানে
রক্ত ধুতে চানটা করি
চর্বিঅলা সাবানে।
ওই যে যাদের দেখছ পাখি
সত্যি যে কেউ নয় ওরা
ভূতের ছানা পোষ মানিয়ে
দোয়েল এখন নয় জোড়া।

চোখের পলক ফেলতে খোকা
একটুও যে পারে না
আজগুবি সব ভয়ের কথায়
গায়ের কাঁপন ছাড়ে না।

বাঁধল বুড়ি খোকার দু’হাত
শক্ত মোটা দড়িতে
পানের পাতায় মন্ত্র পড়ে
গুনল সময় কড়িতে।

হিসেব করে দেখল বুড়ি
হিব্রæ ভাষার বানানে
মধ্যরাতেই বলি দিলে
ফুটবে কুঁড়ি বাগানে।

কাঁদল খোকা অনেক করে
বলল, বুড়ি শোন রে
আম্মু আমার কাঁদছে ঘরে
কাঁদছে ছোট বোন রে।

অট্টহাসি হাসল বুড়ি
কাঁপল আকাশ ভাই রে
পড়তে যদি অমন ফাঁদে
বলতে আমি নাই রে।

শীতলপাটি বিছায় বুড়ি
ঘুম দেবে সে আচ্ছা
ঘুমের থেকে উঠেই খাবে
মানুষের এই বাচ্চা।

বুড়ির ছিল তিনটে ছেলে
একটা ছিল কানা
আর যে দুটো, শেয়ালমুখো
বলতে এসব মানা।

বলছি তবু, খেয়াল রেখো
কেউ যেন টের পায় না
শেয়ালমুখো দুইটা ছেলে
হঠাৎ পেল আয়না।

কানার হাতে আয়না দিয়ে
নাইতে গেল পুকুরে
কানার থেকে আয়না নিয়ে
দৌড়ে পালায় কুকুরে।

পুকুর থেকে ফিরেই দ্যাখে,
আয়না কানার হাতে নেই
রাগের মাথায় শেয়ালমুখো
মারল চাকু কানাকেই।

রক্ত দেখে হকচকিয়ে
দু’ভাই মিলে ছুটল
সব হারিয়ে ডাইনি বুড়ি
কত্ত মাথা কুটল।

বুড়ির মনে দুঃখ ছিল
তিনটে ছেলের জন্য
ভাবত বুড়ি বাঘেই খেল
বাঘ যে খুবই বন্য।

এসব অনেক আগের কথা
সাক্ষি ছিল একজনা
নেংটি ইঁদুর জানত সবই
কাউকে কিছু বলত না।

কুঁড়ের নিচে নেংটি ইঁদুর
থাকত মাটি খুঁড়ে
লাগলে খিদে গর্ত থেকে
বের হতো সে দূরে।

বিষটি তো নেই বাইরে এখন
ডাকছে ব্যাঙা ঘ্যাঙর ঘ্যাং
নেংটি ইঁদুর ঘুরতে এসে
মারল খোকার পায়ে ল্যাং।

শান্ত খোকা কাঁদছে না আর
হেঁচকি শুধু তুলছে
নেংটি ইঁদুর বুঝল সবই
লেজটা যে তার দুলছে।

বলল খোকা, ইঁদুর ভায়া
ভুলের মাসুল দিচ্ছি
ভুল কি ছিল ছোট্ট খোকার?
এবার সেটা লিখছি।

অফিস থেকে আব্বু এসে
খেলতে দেখে বলল,
খুব যে খেলা হচ্ছে দেখি
কানটা টেনে ডলল।

রাতের বেলা পড়ছিল সে
খেলনা ছিল হাতে
আম্মু এসে দ্যায় বকুনি
কান্না পেল তাতে।

হঠাৎ এমন রাগ চড়ে যায়
নামল খোকা রাস্তায়
আম্মু তাকে আর পাবে না
সকাল বেলার নাশতায়।

সবটা শুনে বলল ইঁদুর,
বুঝছি তোমার কেসটা
বিজ্ঞ ইঁদুর বলল হেসে,
দেখলে তো কি শেষটা?

বয়েস আমার একশো আশি
দাঁতগুলো নয় শক্ত
বাঁধন তোমার কাটতে গেলে
বের হয়ে খুব রক্ত।

এরচে ভালো জানায় তোমায়
একটা গোপন ঘটনা
রাখবে মনে, এসব কিন্তু
নয়তো মোটেও রটনা।
ডাইনি বুড়ি উঠলে তাকে
বলবে কথা অল্প।
নেংটি ইঁদুর বলল তাকে
তিনটে ছেলের গল্প।

খাবার খুঁজে এদিক-ওদিক
একটু সময় ঘুরে
হতাশ হয়ে নেংটি ইঁদুর
ছুটল অনেক দূরে।

সময় মতো জাগল বুড়ি
ভাঙল দেহের আড়মোড়া
পাথর ঘঁষে শানায় বুড়ি
বালির ওপর তার ছোরা।

মওকা বুঝে বলল খোকা
গোপন কথা সব খুলে
আছড়ে পড়ে কাঁদল বুড়ি
হাত বোলালো তার চুলে।

সকাল হলে অনেক কেঁদে
থামল বুড়ির কান্না
ভাবল মনে, থাকব বনে
মানুষ মারা আর না।

হাতের পায়ের বাঁধন খুলে
বলল বুড়ি খোকাকে
যাও ফিরে যাও মায়ের কাছে
দিলাম ছেড়ে তোমাকে।

এই যে রাখো জাদুর লাঠি
যতেœ রেখো এটা
ঠুকলে মাটি মিলবে হাতে
চাইবে যখন যেটা।

সঙ্গে আরও দিলাম তোমায়
এই যে টিয়ে পাখি
রোজ সকালে ঘুম ভাঙাবে
করবে ডাকাডাকি।

হনহনিয়ে ছোটটো খোকা
জাদুর লাঠি নিয়ে
ফিরল বাড়ি দুপুরবেলা
সঙ্গী ছিল টিয়ে।