আবু তাহের সরফরাজের চারটি সুফিকবিতা
প্রকাশিত : মার্চ ১৭, ২০২২
সাঁকো
রাত্রি এখন ভয়াল ভীষণ
অন্ধকারে ঢাকা
অন্ধকারেই আলোর রোপণ
ঘুরছে সময়চাকা।
পথের ওপর উঁচুনিচু
কত্ত রকম বাধা
সূর্যোদয়ে আলোর উদয়
কালোই তখন শাদা।
ভয়ের কাঁটা বিঁধেই আছে
কালো-শাদার মাঝে
তাদের উভয় রূপ যে একক
বোঝার বিষয় আছে।
বুঝতে শেখা জানতে চাওয়া
মানুষগুলো একা
এক পৃথিবীর একক নিয়েই
একটি বইয়ের লেখা।
বইটা কোথায়? বইটা কোথায়?
খুঁজছ কোথাই? দ্যাখো—
আল্লাহ এবং তোমার মাঝে
রয়েছে এক সাঁকো।
পৃথিবীর পথে পথে
আমি মারা যাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছি মৃত্যুদূত
বিশাল দুই ডানায় ভর দিয়ে ছুটে আসছেন আমার দিকে
তারমানে আমি মরে যাব, আর কিছু সময়
এরপর আমি আর বেঁচে থাকব না, এতদিন
কত কত মৃত্যু চোখের সামনে দেখেছি
দেখেছি কীভাবে কতভাবে মানুষ মরে যায়
এইসব দেখতে দেখতে এইসব ডালভাত মনে হতো এতদিন
এখন আমি দেখছি, ওই তো
আমার মৃত্যু ছুটে আসছেন আমার দিকে
আমি ভয়টয় পেলাম না, হাহাকার টের পেলাম
চোখের সামনে দেখতে পেলাম আবদুহুর মুখ
ছায়াবীথি আর রিপা খাতুনের মুখ, এক চিলতে ছায়ার মতো আমার বসতভিটে
আমি মারা যাব। যেতে তো হবেই, তবে
কীভাবে হে চলবে আমার ফেলে যাওয়া সংসার?
কে তাকে ঠেলে নেবে নাভিশ্বাস তুলে?
আল্লাহ?
আমি কি সারা জীবনে তার প্রতি একাত্ম হতে পেরেছি?
পারিনি তো হে, তবে কেন আমি তার কাঁধে তুলে দেব আমার বোঝা?
অথচ এই বোঝা বইতেই আমি আমার আশা-আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে
বন্দি থাকলাম এই মহাবিশ্বের ছোট্ট এক বিন্দুর ভেতর
চোখ তুলে দেখলাম না পর্যন্ত জগৎ-সংসার, আর এখন
বুঝতেছি, এক জীবন দিয়েও আমি নিরাপত্তা তৈরি করতে পারিনি
ওই তো ছুটে আসছেন মৃত্যুদূত
আমি বুঝতেছি যে, পৃথিবীর পথে ঘুরে আশা-আকাঙ্ক্ষার রেণু
পথে পথে ছড়ানোই আসলে মানুষের কাজ, এছাড়া
মানুষের আর তো বিশেষ কোনো কাজটাজ নেই
পৃথিবীর পথে পথে...
ইবলিস
তোমার নিকটতম প্রতিবেশী যে
সারারাত সে ঘুমোতে পারে না
সারারাত সে জেগে থাকে তোমার বাড়ির দিকে চেয়ে
তোমার বাড়িতে বাঁধা আছে ইবলিস
তুমি তা জানো না
তুমি জানো না বলে তোমার প্রতিবেশী তা জানে
আর তাই সারারাত সে জেগে থাকে ইবলিসের হাসি শুনবে বলে
কিন্তু প্রতিবার সে তোমার হাসি শুনতে পায়
অথচ তুমি তা জানো না
তোমার নিকটতম প্রতিবেশী যখন ঘুমিয়ে পড়ে
তুমি তখন জেগে থাকো
জেগে জেগে চেয়ে থাকো তোমার নিকটতম প্রতিবেশীর বাড়ির দিকে
তার বাড়িতে বাঁধা আছে ইবলিস, সে তা জানে না
সে জানে না বলে তুমি তা জানো, আর তাই
সারারাত জেগে থাকো ইবলিসের হাসি শুনবে বলে
আর মাঝে মাঝে তুমি শুনতে পাও তোমার নিকটতম প্রতিবেশীর হাসি
অথচ সে তা জানে না।
আমরা আসলে ভাসছি
আমরা আসলে ভাসছি
পৃথিবীর যেরকম ভাসছে মহাশূন্যেও কোনো এক বিন্দু হয়ে
আমরা তবু হাসছি
যেন আমরা কখনোই মারা যাব না, আমরা বাস্তব
আর তাই নিশ্চিত।
পাঁচভূতে তৈয়ার এই দেহ
কত কত কিছুর বাসনা তাহার
কোকিলের ডাক শুনে
কোনো নীলিমা খাতুনের চোখের ইশারায়
আদিম বীজরসের প্রাণ নড়েচড়ে ওঠে, আহা
সেই তো সুন্দরের ইশারা
তবু তা প্রকৃতির নিয়ম নয়
মানুষ যেহেতু জগতে আল্লাহর প্রতিনিধি
কু আর সু, এই নিয়মের সে দাস অনুদাস
যে সম্পর্ক প্রকৃতির বিধান নয়
তার ইশারায় নিজেকে লীন করে দেয়ার বাসনাই কাম
পাঁচভূতের এক ভূত, তবু সে প্রেমিক
জগতে কেউ কেউ এরকম প্রেমিক
কেউ চোর কেউ বাটপার কেউ ধর্ষক
আমরা কিন্তু ভাসছি, পৃথিবী যেরকম...
মহাশূন্যে পৃথিবীকে যে শক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে, তা সু
এই সু প্রাকৃতিক
সুতরাং, হে আমার বিশ্বাসীদের উত্তরপুরুষ
স্মরণ করো তোমার প্রতিপালকের সেই বাণী:
যারা বিশ্বাসী তারা থাকবে নিশ্চিন্তে, ইহলোকে ও পরলোকে
আর পরকালে বিশ্বাসীরা কখনোই বিষণ্ণ হবে না।