অলঙ্করণ: রিফাত বিন সালাম
আবু তাহের সরফরাজের আরও দশটি ইসলামি গান
প্রকাশিত : নভেম্বর ১৫, ২০২০
যুগে যুগে মানবকে আলোর দিশা দিতেই নবির আগমন। আল্লাহর পথে মানবিক সমর্পণের যে আবেদন তা প্রেমের, সুন্দরের। তার যে বাঁধন তা আসলে বাঁধন উন্মোচনের পূর্বরাগ মাত্র। তবু সে পথ থেকেই ভ্রষ্ট মানুষ, বেপথু। কারণ আল্লাহর সঙ্কেত অনুধাবনের তাগিদ তার নিতান্তই ক্ষুদ্র বুদ্ধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নেই তাতে মজে থাকার অনুনয়, ডুবে যাওয়ার মতো নেশাতুর প্রেম। অথচ ঈশ্বরপ্রেম নির্বিকল্প। ইসলামের এই নির্বিকল্প সমর্পণের ভাবটিকেই তার গানগুলোর মধ্য দিয়ে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন কবি আবু তাহের সরফরাজ। ছোট ছোট পঙ্ক্তিগুলো তার ঈশ্বর ভাব ও মানবিক সীমাবদ্ধতা বোধের অদ্ভুত মেলবন্ধন। কবি বলেছেন, ‘তৃষ্ণাকাতর পথিক আমি মিলবে কি অমৃত/নূরের নবি দেখব বলে বুকখানা তৃষিত।‘ নূরনবির দর্শন লাভের জন্য তৃষিত কবি। প্রতিটি পঙ্ক্তির মধ্যে ব্যক্ত হয়েছে সেই তৃষ্ণা ও উত্তরণের আকাঙ্ক্ষা। ৩ নভেম্বর ছাড়পত্রে প্রকাশিত হয়েছিল তার দশটি ইসলামি গান। আজ প্রকাশিত হলো আরও দশটি। শ্রেয়া চক্রবর্তী: কবি ও কথাসাহিত্যিক, কলকাতা
১.
আমার বুকের এই জমিনে তুলব কাবাঘর
হৃদমাঝারে উঠবে ধ্বনি আল্লাহু আকবর।
আল্লাহরই নাম শুনে মন হবে উদ্বেলিত
অশ্রুচোখে বইবে নদী আনন্দে আপ্লুত।
নিরানব্বই নামের গুণে
পাপ ও শোকের এই ভুবনে
উচ্ছ্বসিত আবেগে মন কাঁপবে থরো থর।।
হৃদয় ধুয়ে যাবে ময়লা পবিত্র ওই নামে
বেহেস্তেরই সৌরভে ফুল ফুটবে হৃদয়ধামে।
এই জীবনের যা আছে পাপ
তার সকলই হবে যে মাফ
শান্ত হয়ে যাবে আমার বুক কাঁপানো ঝড়।।
২.
প্রেমিক তোমার প্রেমের দরজা খুলে প্রেম দ্যাখাও
তোমার প্রেমে লীন হয়ে আজ ছাড়ব জীবন নাও।
ঝড়-তুফানে হারাই যদি সঠিক পথের দিশা
তোমার নূরের ঝলক যেন কাটায় অমানিশা।
পাপ তরণীর মাঝি মাল্লা
দিচ্ছে জীবন স্রোতে পাল্লা
তাদের মাঝে আমার নাওটি তোমার কোরে নাও।।
রঙ-বেরঙের পাল তুলে নাও চলবে সাগর বুকে
পাহাড় সমান ঢেউ এলেও তা চলবে যে সম্মুখে।
বৈঠা হাতে বসব আমি
কলমা মুখে জগৎস্বামী
এই জীবনের অথই সাগর পার করিয়ে দাও।।
৩.
লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মাদ রাসুল উল্লা
কলমা শুধু উচ্চারণে— এই কি মুসলমান আল্লা?
তাওহিদের মর্ম না বুঝে বিভক্ত আজ জাতি
করছে ইসলামেরই নামে ধর্মীয় বেসাতি।
আইয়ামে জাহেলিয়াত
চলছে এখন হে মুহাম্মদ
কেউ হতে চায় না যে খোদার প্রেমে ফানা ফিল্লা।।
এলেন নবি আরব দেশে বর্বরেরই মাঝে
তারও চেয়ে বর্বরতা এখনকার সমাজে।
কলমা যেন মুখের কথা
বিশ্বাসে নেই বাস্তবতা
নামের মুসলমান জগতে মুখেই যে দ্যায় পাল্লা।।
৪.
তৃষ্ণাকাতর পথিক আমি মিলবে কি অমৃত?
নূরের নবি দেখব বলে বুকখানা তৃষিত।
মরুর দেশে জন্ম নিলে নবিজির সময়
দেখতে পেতাম মুখখানি তার কী যে জ্যোতির্ময়!
পবিত্র সেই মুখের ভাষা
শুনে পূরণ করতাম আশা
তার চরণের খেদমতে ভাই হতাম ব্যবহৃত।।
আবু বকর ওমর আলি— তাঁর যে কত সাহাবি
আমিও সেই দলের হতাম, আর কে আমায় ফেরাবি!
জিহাদের ওই ময়দানে ভাই
যেতাম ছুটে আমিও হায়
শহিদ হয়ে যেতাম তবু হতাম না গো ভীত।।
৫.
এই ধরণীর মাটির বুকে বেহেস্তি এক ফুল
উঠল ফুটে গৌরবে তার ধন্য সৃষ্টিকূল।
মানুষ হয়েও ফুলের মতো গন্ধ নিয়ে বুকে
দেন ছড়িয়ে সবার মাঝে দুঃখে এবং সুখে।
বেহেস্তের ওই ফুলবাগানে
ফুটলো যে ফুল তারই ঘ্রাণে
এই পৃথিবীর আকাশ বাতাস হলো যে মশগুল।।
অবিশ্বাসীর দেশে তিনি হলেন আল আমিন
গরিবদুখি উৎপীড়িতের বুকে সমাসীন।
ঊষর মরু উঠল হেসে
পাপের ময়লা গেল ভেসে
মরুর রাখাল হয়ে গেলেন আল্লাহর রাসুল।।
৬.
আল্লাহ আমায় পালন করেন খিদেয় যোগান অন্ন
রাসুল দেখান পথের দিশা আখিরাতের জন্য।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি আল হামদু লিল্লাহ
সব কিছুরই চাইতে মহান আরশের আল্লাহ।
প্রশংসিত তিনি অতি
তিনিই সকল কিছুর গতি
আসমানে ও জমিনে তাই ধন্য তিনি ধন্য।।
রাসুল নিয়ে এলেন আলো অন্ধকার ভুবনে
মূর্খতা যে পাপের কারণ জানালেন সেই ক্ষণে।
মানুষকে তাই শেখাতে জ্ঞান
রেখে গেলেন হাদিস-কোরান
এসব জ্ঞানের বাইরে গেলেই জীবন হবে শূন্য।।
৭.
পথ না চিনে পথ হেঁটেছি আমি গোনাহগার
আল্লাহ আমায় দাও গো ক্ষমা নিজ গুণে তোমার।
এই পৃথিবীর গোলকধাঁধায় ঘুরছে যে মানুষ
ভাবছে না কেউ জীবনটা এক মুহূর্তের ফানুস।
এই মানুষের ভিড়ে আমি
আরেক মানুষ ওগো স্বামী
তোমার অনুভবের দরজা দাও খুলে আমার।
এক আকাশের নিচে মানুষ কেউ কারো নয় চেনা
রঙবাহারি বাজার খুলে করছে বেচাকেনা
হঠাৎ করেই রোজ কেয়ামত
আসবে যখন সব নেয়ামত
ধ্বংস হয়ে থাকবে শুধু আরশ খোদা তালার।।
৮.
আসবে কবে সেদিন আমার দেখবো চোখে খোদার নূর
আল্লাহ তোমার প্রেমপিয়াসী এই প্রেমিকের হৃদয়পুর।
সুন্দরে লীন চাই যে হতে অসুন্দরের জগতে
যদিও তা মিলবে না হায় এ সংসারে নগদে!
তৃষ্ণাবুকে খুঁজি সুন্দর
খুলে বুকের গোপন অন্দর
অনুভবে পাই যে তাকে, দেখি না তার রূপের নূর।।
সব মানুষই যে যার মতো বেঁচে আছে সংসারে
আমিই কেবল শূন্যবুকে পূর্ণ হতে চাই তারে।
সকল কিছুর যিনি সুন্দর
তার চরণে দেব অন্তর
আল্লাহ আমায় দাও গো দিদার, চাই না আমি বেহেস্ত হুর।।
৯.
খোদার প্রেমে হও যদি মন একটুও কাতর
চোখের ধারায় গলবে বুকের জমানো পাথর।
কে আছে আর খোদার মতো এমন স্নেহময়
সকল কিছু দিয়েও যে জন চায় না বিনিময়।
একটু ভেবে দ্যাখো রে মন
তার দয়াতেই বাঁচে জীবন
সেই করুণাময় যে করেন সবাইকে আদর।।
এত স্নেহের মধ্যে থেকেও আমরা উদাসীন
দিনে দিনে বাড়ছে দয়াময়ের প্রতি ঋণ।
দানের প্রতিদান যদি দাও
দেবেন তিনি যা তুমি চাও
আখিরাতে মাখবে তুমি বেহেস্তি আতর।।
১০.
এই ধরণীর বুকে যারা এনেছিল জ্ঞান
আজকে তারাই মূর্খ জাতি, নামেই মুসলমান।
যাদের জ্ঞানে এবং কর্মে কাঁপতো সারা বিশ্ব
অজ্ঞানতার অন্ধকারে আজ যে তারা নিঃস্ব!
মূর্খতা আজ ঘরে ঘরে
না বুঝে সব কোরান পড়ে
পুণ্যলাভের উপায় শুধুই সেই জীবনবিধান।।
মুহাম্মদের দেখানো পথ ভুলেই গেছে তারা
এই সুযোগে অন্যজাতি দিচ্ছে মাথাচাড়া।
মিথ্যে দিয়ে সত্য ঢেকে
সভ্যতা আজ বলছে হেঁকে,
ধর্মনিরপেক্ষতাতেই মানুষের কল্যাণ।।