Roseate Spoonbill by John James
আবার দ্যাখা হবে হে সুন্দর
সাইফুল ইসলাম সুজনপ্রকাশিত : জুন ০৪, ২০১৮
একটা দিন সুন্দর তা কীভাবে নির্ধারিত হয়? দিনশেষে একটা আনন্দময় প্রাপ্তি নিশ্চয়ই। তবে দিনটা কেমন যাবে এ নিয়েও চলে আশঙ্কা। আজ এমনি একটি আনন্দঘন দিনের কথা বলবো, যার শুরুটা ছিল বড্ড আশঙ্কাজনক।
১ জুন ২০১৮, পবিত্র জুম্মাবার। সেহরি শেষ করে নামাজ পড়ে একটু ঘুম দিলাম। এরপর ভোর সাড়ে ছ’টার দিকে ফিরোজ ড্রাইভারকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ছুটলাম আমার প্রাণের, শৈশব-কৈশোর বিজড়িত নানাবাড়ির দিকে। জায়গাটা একটু ঘুরেফিরে দেখব।
বিধি বাম! দীর্ঘ ২১ কি.মি পারি দিয়ে শেষ আধা কি.মি রাস্তার বেহাল দশায় গাড়ি যেতে পারল না। এদিন বলা যায়, বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। অন্তত আমার এরকমই মনে হয়। কী আর করা! ফিরে গেলাম আমার মূল গন্তব্যের দিকে। যেখানে আমার কৈশোর কালের সুন্দর স্মৃতিপট ভেসে বেড়ায়।
তার আগে কিছুসময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ রাজশাহী হতে রওনা দিয়েছিল দুটো দল। তারা এসছিল শত বৃষ্টির ঝাপটা উপেক্ষা করে। একদলে আমার মা-বাবা, আরেকদলে নাইমুল হাসান ও মাহাফিজুর রহমান ভাই। তারা আসলেন সাড়ে ন’টার দিকে।
এরপর মা-বাবাকে নানাবাড়ির দিকে বিদায় দিয়ে আমরা দিলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যকে লক্ষ্য করে, যেখানে আমাদের দর্শন দিয়েছিল মহান আল্লাহর সৃষ্টি অতিসুন্দর দুটো পাখি। সাড়ে দশটার দিকে গন্তব্যে পৌঁছলাম। শুরু হলো আমাদের বিস্ময়ের পালা। প্রথমে কিছুসময় আমরা Great Cormorant, Indian Cormorant and Oriental Darter এর কিছু মুহুর্মুহু চিত্র তুলি। এরপর পূব আকাশপথে উড়ে আসে কিছু আইবিসের ঝাঁক। তাদের ফলো করতে গিয়েই বিস্ময়ের চরম, যা ইতিহাস হয়ে থাকার কথা! দেখা মিললো একটি পেন্টেড স্টর্কের বাচ্চার। বয়স আনুমানিক চার মাস। অতি বিস্ময়ের উইরেসিয়ান স্পুনবিল।
আমি অবাক। মুখ দিয়ে কথাই বেরুচ্ছিল না। শুধু মাহিফুজুর ভাইকে বললাম, ভাই, ওই দ্যাখেন স্পুনবিল। ওইদিকে জোঁকের ভয়ে নৌকায় বসে আছেন নাইমুল ভাই। আমি কই, ভাই, চামচ আছে? ভাইতো জোঁকের ভয়ে থেকে এটা তামাশা ভাবলেন। পরে প্রায় ১৫ মিনিট পেরোলে তার ধৈর্য্য আর রইল না। জিজ্ঞেস করলেন, কাহিনিটা কি? যেই শুনলেন স্পুনবিল, অমনি কোথায় জোঁক-সাপ, সব তুচ্ছ করে একেবারে ঝাপ দিলেন। উনার লেন্স আমার হাতে, সেটা চেঞ্জ করে উনি ওনার জন্মদিনটাকে (১ জুন) স্বার্থক ও চিরস্মরণীয় করে রাখলেন।
এখানে আরও দুজনের নাম না বললেই নয়। একজন জিকেন ভাই ও উনার মেয়ে জনা মামা (আমাদের নতুন সদস্যা)। আগের দিনও জিকেন ভাইকে বলে রেখেছিলাম, আমরা আসছি। উনি জনা মামাকে সাথে নিয়ে হাজির। সারাক্ষণ উপভোগ করেছেন আমাদের পাগলামি। জিকেন ভাইয়ের নাম তো স্বর্ণাক্ষরে এই ইতিহাসে থাকার নাম। ওনার জন্যই তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে পাখি শিকার বন্ধ আছে। এর ফলে এ অপরূপ সৃষ্টির দেখা মিলছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এভাবে চলতে থাকলে এখানেই আবার দেখা মিলবে শৈশবকালে দেখা শত শত পেলিকেন। ভাবছেন বাড়িয়ে বলছি, মোটেও না। অপেক্ষা করেন, সেই নিয়া একটা পুরো বই লিখে দেব।
পুনশ্চ: Painted Stork (Juvenile) & Eurasian Spoonbill এরই মধ্যে উড়াল দিছে পূব আকাশে। আমরা দেখলাম আর মনে মনে কইলাম, আবার দ্যাখা হবে হে সুন্দর!