আজ বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে আজ বৃহস্পতিবার পালন করা হচ্ছে ‘বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসায় শিশু ক্যানসার নিরাময় সম্ভব’।

দিবসটি উপলক্ষে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মিলনায়তনে শিশু হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে শোভাযাত্রা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শিশুদের ক্যানসার বা চাইল্ডহুড ক্যানসার বলতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়াকে বোঝায়। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্যানসার কিছুটা ভিন্ন।

সংস্থাটি বলছে, শিশুদের মধ্যে সাধারণত লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যানসার বেশি হয়। ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত।

বাংলাদেশের পরিস্থিতিও প্রায় একই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজির বহির্বিভাগে চার হাজার ৭৮০ ক্যানসার আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে এক হাজার শিশুকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এসব রোগীর ৭৮ শতাংশের রক্তের ক্যানসার, আট দশমিক ছয় শতাংশের বিভিন্ন ধরনের টিউমার, ১৩ শতাংশের রক্তের বিভিন্ন রোগ। প্রতিষ্ঠানটির দেয়া তথ্য মতে, রক্তের ক্যানসারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া।

বিএসএমএমইউয়ের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, প্রতিবছর নতুন করে কত শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। ধারণা করা হয়, প্রতিবছর নতুন করে আট হাজার শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, গত এক বছরে বিএসএমইউতে চিকিৎসা নেয়া ৭০ শতাংশ শিশু এখন ভালো আছে। সমস্যা হলো দেশের চিকিৎসার প্রতি আস্থা না থাকা, সচেতনতার অভাব ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা।

তিনি বলেন, দেশে উন্নত ক্যানসার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলেই ১০ হাজার ক্যানসার আক্রান্ত শিশু পুরোপুরি রোগমুক্ত। তবে অপপ্রচারের কারণে মানুষ বিদেশমুখী হচ্ছে। ক্যানসারের অনেক ওষুধ সরকার দিচ্ছে, তবে তা অপ্রতুল। অ্যান্টিবায়োটিকসহ আরও কিছু ওষুধ সরকারিভাবে পেলে রোগীর চিকিৎসা খরচ কমে আসবে এবং মানুষ চিকিৎসায় আগ্রহী হবে।

ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যানসারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর চার লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই মোট সংখ্যার ৮০ শতাংশ শিশু আক্রান্ত। এসব দেশে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের বেঁচে থাকার হার মাত্র পাঁচ শতাংশ। অন্যদিকে, উন্নত দেশগুলোয় এ হার ৮০ শতাংশ।

সংস্থাটির তথ্যমতে, বর্তমানে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যানসার আক্রান্ত শিশু রয়েছে। প্রতি বছর শনাক্ত হয় অন্তত ছয় থেকে আট হাজার। ২০০৫ সালেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর হার ছিল সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ। আর সচেতন না হলে ২০৩০ সালে এ হার দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে।