আকরাম খানের চারটি কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ১২, ২০২০

জন্মের আগে

আমার পাঁচ বছরের ছেলে ঋষভের অভিব্যক্তিতে
বিস্মৃত পূর্বপুরুষেরা পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে।
ঘুমের মধ্যে যখন আমার কিশোরী মেয়ে আদৃতার
ঠোঁট দুটি নড়ে, আমি কান পাতি
অতল কুয়ার গভীর থেকে উঠে আসে লাজুক কিছু ধ্বনি।

আকাশে মিটিমিটি জ্বলা তারারা আসলে নিভে গেছে,
শৈশবে বিস্মিত হয়েছিলাম শুনে— অনেক দিন আগে
ওরা নাকি মরে গেছে !

অন্ধকারে ডেরা গাড়ি, আঁধারে দেখার দৃষ্টি খুঁজে ফিরি
ছিলাম সূর্যের দিকে পাপড়ি মেলে, গুটিয়ে হতে চাই কুঁড়ি

পদচিহ্ন ধরে ফিরে যেতে চাই জন্মেরও আগে!

আমি ও শাশুড়ি আম্মা

ডা. লায়লা আফরোজকে যখন পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম
ডাক্তারনির মা তার বিদ্বান, রূপসী মেয়ের নিষ্ঠুরতায় আর
আন্ডার গ্র্যাজুয়েট মানে অকাট মূর্খ জামাইয়ের চতুরতায়
বিদীর্ণ হয়ে মানসিকভাবে প্রায় ভারসাম্যহীন
হয়ে পড়েছিলেন।
সারাদিন শুয়ে থাকতেন আর সারারাত জেগে
বসে থাকতেন, ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল
মার কাছ থেকে মেয়েকে ছিনিয়ে আনার অপরাধ বোধে আমার চোখের ঘুমও হয়েছিল নিরুদ্দেশ।  

বর্তমানে আমাদের সাথে শাশুড়ি আম্মার
অত্যন্ত সৌহৃর্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক।
আমার ছেলেমেয়ে তার দুই চোখের মনি
তার স্নেহ আমাদের পরিবারে অমূল্য আশীর্বাদ
উনার উপস্থিতি অভেদ্য রক্ষাকবচ।
এখন প্রতিরাতে একই পাতা থেকে
আমি আর আমার শাশুড়ি আম্মা ঘুমের বড়ি খেয়ে
নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের অতলে তলিয়ে যাই।

বেদনার বাড়ি

বেদনা এ বাড়ির সবসময়ের বাসিন্দা
মাঝে মধ্যে ছুটিছাটায় হাওয়া বদলে যায়
তখন ফাঁকা বাড়িতে আনন্দ তার কিছু
দোস্ত বন্ধু নিয়ে থাকে।
বেদনা ফিরে এলে বিছানা গুটিয়ে, বস্তা কাঁধে
তারা আবার রাস্তায় নামে।
সাময়িক এই অনুপস্থিতি
একঘেয়ে বেদনাকে সহনীয় করে তোলে!

বেদনা স্বীকৃতি চায়
ভালো না বাসলেও ওকে মেনে নাও
চোখের পানিই সত্যিকারের সহমর্মী!

মূল্য

অর্থকষ্টে থাকলেই মূল্য নিয়ে চিন্তা করি
ভাবি বসে বাজারদর।
বিক্রয়যোগ্য কি আছে আমার?
বহুদিনের অভ্যাস, অক্ষর থেকে শব্দ
শব্দ থেকে অবলীলায় লিখে ফেলি আস্ত কবিতা।
নয়া উদারপন্থী এই সময়ে কবিতার দর কত?
বাজারে কাব্য
ঘর পরিষ্কার করতে আসা ছুটা মেয়েটার কাছে
বারান্দায় উড়ে আসা গাছের শুকনা পাতার মতোই
আবর্জনা!