অর্ক দীপের ৬ কবিতা
প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৪, ২০২৪
মরণকামড়
যারা অন্ধকারে আলোর কথা বলে, তাদের জন্য
তোর জিভ এখনো ঠাণ্ডা মাংস হয়ে যায়নি
তোর গলা এখনো তলিয়ে যায়নি কাফনের অন্ধকারে।
অজস্র লাথি তোর শরীরে কামড় বসিয়ে গেছে,
তবু তুই বুকে হাঁটিস না,
আগাছার ময়দানে তুই একটুকরো ঘাসজমি।
শেষ কয়েকটা কয়লা এখনও নিঃশ্বাস ফেলছে—
যে ক’টা হাতুড়ি আছে,
তৈরি—
প্রত্যাঘাত নিয়ে।
আধমরা ঠোঁট থেকে তারা উগরে আসছে
বহুযুগের টক গন্ধ বমির মতো।
দেহগুলো শেকলের কাপড় খুলে
উল্লাস করছে নগ্নতার মিছিলে।
শরীরের শেষ টুকরো পচে যাওয়ার আগে—
যথেষ্ট সময় বাকি।
চল চিৎকার করি—
ছিঁড়ে খাই হানাদার কুকুরের যকৃৎ।
অনুপ্রেরণা: ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ
অপেক্ষা
প্রশ্ন কোরো না
প্রশ্ন কোরো না—
ঠিক কয় যুগ তোমার অপেক্ষায় পূর্ণিমা গুনেছি,
হিসেব করতে যেও না,
ক’টা বসন্ত কাটিয়েছি আবিরের অপেক্ষায়—
লাল পলাশের বনে
তোমাকেই শুধু ধাওয়া করে গেছি,
যেখানে তুমি কখনও ছিলে না।
২.
দক্ষিণের জানালার হাওয়ায়
সেই ক’টা আঙুলের ছোঁয়া পাই বারবার।
আজ আবার যখন সে কপালে চুমু দিল
কালোত্তীর্ণ কিছু বিকেল
আচমকা ভেসে আসে।
আঙুল চলাচল করে ক্ষতস্থান ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছায়।
আজাদির মিছিলে
উৎসর্গ: কাতালোনিয়া ও কাশ্মিরসহ বিশ্বের মুক্তিকামীদের প্রতি
ভোরের আকাশ জোড়া একগাদা অন্ধকার,
গোটা শরীরে রাত্রির দগদগে ক্ষত।
এতদিন যার অপেক্ষায় রাত্রিযাপন
সেই সকাল আসেনি,
সেই সকাল এখনো অধরা
যার খোঁজে
অজস্র শরীর
কাফন মুড়েছিল।
হারিয়ে গিয়েছিল
পৃথিবীর রক্তাক্ত মরুদ্যান জুড়ে।
রাত্রির আকাশ জোড়া ছায়ায়
লুকিয়ে রয়েছে
রাতজাগা পাখিদের
শেষ আশ্রয়।
কোথায় সেই মোহনা,
যেখানে অন্ধকারের রঙ আলোর কাছে ধরা দেবে?
নোঙর বাঁধবে
চির ক্লান্তিহীন নাবিকের নৌকো!
যৌবনের আদিম বসন্তে
শুকনো রক্তের আবির মেখে
যখন নিরুদ্দেশ হচ্ছিলাম,
শরীর জুড়ে পেয়েছিলাম
অসংখ্য হাতের ছোঁয়া,
রক্ত মাংসের অনেকগুলো দেহ
বারবার আঁকড়ে ধরছিল—
তবু ঝুঁকি নিচ্ছিলাম
অগোছালো যুবতীর মতো
নতুন একটা সকালকে ছুঁয়ে দেখার।
খুব কাছেই ছিল
তার লাল আঁচল ঘেরা নিকোনো উঠোন—
ক্ষীণ কণ্ঠে
ভেসে আসছিল—
আলো–আঁধারি সীমান্তের শঙ্খচিল।
পথ শেষ হয়নি
ক্লান্তিহীন নাবিক
নাও বাইছে নতুন রাস্তায়।
যেখানে পথঢাকা লাল উৎসব
দুঃখের আর্তি—
নিষিদ্ধ।
তবু থেমে থাকেনি
শরীর জোড়া মাকড়ের উৎপাত—
এখনো প্রেমিকার শরীর আড়াল করে রাখে
মৃত্যুর কাফন।
সকালের স্পর্শ
এখনো অধরা।
অগত্যা আরও এগিয়ে যাওয়া—
রক্তকরবীর খোঁজে।
অনুপ্রেরণা: ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ
বিচ্ছেদ পত্র অথবা আগামীর প্রেমপত্র
গৌরী লংকেশ, রোহিত ও আখলাকসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সমস্ত শহিদদের
আমাকে কবর দাও তোমার নিষিদ্ধ গলিতে।
সামনের দিকে তাকানো এখন দেশদ্রোহ।
আজকাল প্রেমিক প্রেম নিবেদন করে
পেয়াদার লাল চোখের নিচে।
হুকুম হয়েছে—
ইট পাথর গারদে বন্দি রেখে,
পাগল কুকুরের রাজত্ব মেনে নেওয়ার।
তবু টিকটিকির চোখ এড়িয়ে
আজও যারা স্বপ্ন দেখে—
তাদের মৃত্যুর কারণ লাগে না।
দাম্ভিক নিজেই উকিল—
আর বিচারক।
কার কাছে বিচার চাইব?
কে করবে ওকালতি?
তবু
দিন কাটে,
রাত কাটে,
তোমার অন্তহীন অপেক্ষায়।
কয়েদখানার শেষ লণ্ঠন নিভে গেলে—
চোখ বুজে স্বপ্ন দেখি,
তোমার সীমন্তজোড়া সপ্তর্ষিমণ্ডল।
শিকলে তিলমাত্র আলোর ঝলক দেখলে মনে হয়—
তোমার আধঘুম গালজুড়ে
ভোর ছড়িয়ে আছে।
সংক্ষেপে
প্রত্যেক সন্ধে কিংবা সকালের অপেক্ষায় বেঁচে আছি—
দেওয়াল আর বন্ধ দরজার ছায়ায়।
ইতিহাস জোড়া আমাদের লড়াকু ইতিবৃত্ত।
ওদের রেওয়াজ পুরোনো;
আমাদের রীতি নতুন নয়।
আমরা বারবার আণবিক বিস্ফোরণ ছাপিয়ে
ফুটিয়েছি রক্তকরবী।
ওদের হেরে যাওয়া আগামীকাল প্রথম নয়।
আমরা জয়ের স্মারকের একান্ত দাবিদার।
প্রিয়,
কী লাভ দুর্ভাগ্যের দোহাই দিয়ে?
কী হবে বিচ্ছেদের অন্ধকার আগলে?
কাঁটাতার ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে।
কয়েক রাত্রির বিচ্ছেদ—
ইতিহাস ঠিক ধুয়ে দেবে।
আজ শত্রু আমাদের দখল নিয়েছে—
তবু ভেবো না,
কয়েক মুহূর্তের বিরহ আমাদের গায়ে লাগবে না।
বিশ্বাস করো—
আমাদের প্রতিজ্ঞা
পাল্টে দেবে আগুনের গতিমুখ।
অনুপ্রেরণা: ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ