অমিতাভ পালের গল্প ‘সেক্সোলজি’
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২১
বিয়ের পর সব পুরুষই সেক্সোলজিস্ট হয়ে ওঠে স্ত্রীর তত্ত্বাবধানে। কিছুটা গাইনোকোলজিস্টও হয়। যেন বিয়ের আগে তারা মাস্টার্স শেষ করে। তারপর বিয়ের পর পিএইচডির জন্য স্ত্রীকে পায় গাইড হিসাবে। অর্জন করে ডক্টরেট ডিগ্রি।
তারও এরকমই হয়েছিল। এর আগে কাপড়ের অজস্র ফালি জড়ানো একটা মমির মতোই মেয়েদেরকে সে দেখেছিল মিউজিয়ামের তাকে। বিয়ে যেন সেই মমিটাকেই তার টেবিলে তুলে দিয়েছিল প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার কাজে। আঙুলের চিমটা আর চোখের ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে অনেক যত্নে কাপড়ের ফালিগুলি সরিয়ে নগ্ন মমিটাকে বের করে এনে তার মরফোলজি শিখেছিল সে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি লিখে রেখেছিল মস্তিষ্কের নোট খাতায়।
সেসময়ই তার মনে প্রশ্ন জেগেছিল মেয়েদের গুরু নিতম্ব ও ভারি উড়ুর ব্যাপারে। কিন্তু গাইড তাকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। কেবল বলেছিল, মেয়েদের এরকমই হয়। উত্তরটা তাকে তৃপ্ত করতে পারেনি বলে এরপর সে শুরু করে মেয়েদের শরীর নিয়ে গবেষণা। কিন্তু এরকম গবেষণা যেকোনো মানব সমাজেই অসহজ, কারণ সব মেয়েইতো আর তার স্ত্রী না। ফলে সে দূর থেকেই রাস্তাঘাটে চলেফিরে বেড়ানো মেয়েদের শরীর দেখতে শুরু করে উত্তরের প্রয়োজনে আর নিজের স্ত্রীর ওপর চলে তার ফলিত গবেষণা।
তারপর কোনো একদিন আর্কিমিডিসের ইউরেকার মতো সে বুঝে ফেলে, যৌনতার সময় ভার সইতে হয় বলে হাজার বছরের বিবর্তনে মেয়েদের নিতম্ব ভারি এবং মাংসল হয়ে উঠেছে। আর তাদের ঊরু পুরু হয়েছে সন্তানের ভার বইবার জন্য।
এভাবেই অভিজ্ঞতা আর ফলিত গবেষণায় মেয়ে নামের অজানা অচেনা যে বিশাল জগৎটা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে আছে, তার ভৌতরূপ স্পষ্ট হয়েছে তার কাছে। যৌবনের শুরুতে এরা ছিল অধরা, রহস্যময় আর রূপকথার মতো। আর বিয়ের পরে এরা হয়েছে মানুষ।
মেয়েরা এটা বোঝে। জানে, ঝোড়ো যৌনতার শেষে তচনচ, এলোমেলো, উন্মোচিত হয়ে যায় তারা। আর তখন কাজ হয়ে যাবার ফলে পুরুষের চোখ থেকে মায়া অঞ্জন উঠিয়ে নেয় প্রকৃতি। শুরু হয় সভ্যতার। এই মায়া অঞ্জনটুকুকে আরেকটু দীর্ঘস্থায়ী করতে, আরেকটু উপভোগ্য করতে মেয়েরা নিজেদের ঢেকে রাখে আগাপাশতলা। উন্মোচনের আলোর চেয়েও রহস্যের ছায়া তাই তাদের প্রিয় প্রসাধন।
তার থিসিস এখন এগোচ্ছে ভৌত থেকে অজৈবের দিকে। ভেঙে যাচ্ছে যুগ্মতার জল, আলাদা হচ্ছে অণু। তাদের বৈশিষ্ট আলাদা, আঁকড়ে ধরবার হাত আলাদা, আলাদা তাপ, চাপ, পরিস্থিতি। অবশ্য তার গাইড দিচ্ছে অন্য পরামর্শ, সন্তান, সংসার, ভবিষ্যৎ। কিন্তু গবেষণার তথ্য, কল্পনা আর সৃজন অন্য কথা বলছে। বলছে স্থানিক যুগ্মতার ভাঙচুড়ের কথা, একক হয়ে উঠবার কথা। একক ও সম্পূর্ণ। তারপর একক পূর্ণ হলে এক বৃহৎ যৌথতায় তারা লীন হবে, সবাই মিলে তৈরি করবে এক বিরাট পরিবার ও সমাজ।
এখন তারা বন্ধুর মতো থাকে। শিক্ষক ও ছাত্রের বন্ধুত্বের মতো, দুই সহপাঠীর বন্ধুত্বের মতো, মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ দুই দেশের মতো। সেখানে ঝগড়া আছে, মিল আছে, মমতা আছে, আনন্দ আছে, বিষণ্ণতা আছে, ফাঁকি আছে এবং নিজের নিজের শরীরকে তৃপ্তি দেয়ার যৌনতাও কখনো কখনো আছে। সেখানে আত্ম আর বহিঃপ্রেম একসাথে জেগে ওঠে। ফলে আমরা হয়ে যায় আমি বা আমি হয়ে ওঠে আমরা।
সে এখন নিজের নামের আগে ডক্টর লিখতেই পারে।