অমিতাভ পালের গল্প ‘প্রজাপতি’
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
অলভ যৌনতায় কাতর তরুণ ছেলেটার হঠাৎ একটা মেয়েকে ভালো লেগে গেল। সে ঠিক করলো, মেয়েটার কাছে গিয়ে এই ভালো লাগার কথা বলবে। তাকে আনতে চাইবে নিজের কাছে, নিজের জীবনের কাছে, নিজের দেহের কাছে। বুঝতে চাইবে যৌনতার স্বাদ, মিলনের আনন্দ, মেয়েরা কারা।
সেইমতো একদিন রাস্তায় মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। তারপর তার হাত ধরে বললো, তোমাকে আমার ভালো লাগে। সাথেসাথেই মেয়েটা চেঁচিয়ে উঠে টান মেরে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে সটান এক চড় মারলো তার গালে। তারপর শুরু করলো অকথ্য গালিগালাজ আর আশপাশের লোকজনকে জানাতে থাকলো নালিশ। আশপাশের লোকজনও এরকম অসহায় একটি মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো বীরদর্পে এবং ছেলেটাকে চরম হেনস্তা করলো। অপমানে লজ্জায় একেবারে নগ্ন হয়ে পড়া ছেলেটা কোনরকমে পালিয়ে বাঁচলো আর মেয়েটা জামাকাপড় থেকে ধুলা ঝাড়ার মতো ঘটনাটা ঝেড়ে ফেলে বিরক্তি ছড়াতে ছড়াতে চলে গেল তার পথে।
পালিয়ে যাওয়া ছেলেটা এরপর ভীষণরকম মনযোগী হলো পড়াশোনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, লাইব্রেরি আর বাসায় নিজের ঘর ছাড়া তাকে কোথাও পাওয়া যেত না। আর এভাবেই শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে সে ঢুকে পড়লো একটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে। এখন সে ভালো বেতন পায়, সম্মান পায় এবং পরিবারের সবার ভালোবাসা পায়।
এমনি করেই কেটে গেল তিনটা বছর। পরিবারের লোকেরা এবার ঠিক করলো ছেলেটার বিয়ে দেবে। সেইমতো পাত্রী দেখাও শুরু হলো। মেয়ে পছন্দের ব্যাপারে ছেলেটা সব দায়িত্ব দিল পরিবারের ওপর আর মনে মনে রুদ্ধ যৌনতার মুক্তির কল্পনায় আচ্ছন্ন হলো। তার তরুণ হৃদয় এখন পরিকল্পনা আর প্রাপ্তির স্বপ্নে বিভোর।
দুই.
বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেটা এখন তার সাজানো বাসরঘরে জীবনের নতুন এক দরজা খোলার অপেক্ষায় বসে আছে। ঠিক এইরকম সময় মেয়েটা এলো এবং তাকে পাশে বসিয়ে ছেলেটা তার হাত ধরতে চাইলো। ঠিক তখনই তার মনে পড়ে গেল বহুদিন আগে একটা হাত ধরার ঘটনার কথা। ব্যাপারটা তাকে কিছুটা ভীত করে তুললো। এখানেও যদি ওইরকম কোনো ঘটনা ঘটে, যদি অপমান আর লাঞ্ছনায় আবার নগ্ন হয়ে যায় সে? সেটাতো রাস্তা ছিল, পালিয়ে বাসায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু নিজের বাসা ছেড়ে এবার সে কোথায় পালাবে? ভাবতে ভাবতেই নিজের হাত দুইটা দূরে সরিয়ে নিল ছেলেটা। সরে বসলো একটু।
এদিকে ছেলেটাকে উসখুস করতে দেখে মেয়েটা তার কাছ ঘেঁষে এগিয়ে এলো আরো নিবিড় হয়ে বসবে বলে। নারী শরীরের নরম স্পর্শে ভাবনার ভিতর থেকে চমকে বেরিয়ে এসে ছেলেটা দেখলো এই মেয়েটাই সেই মেয়েটা— যে তাকে রাস্তায় অপমানে গঞ্জনায় শেষ করে দিয়েছিল। সাথেসাথে পুরানো রাগ ফিরে এলো তার মনে। সেই রাগ এবং মুক্তির পথ খুঁজতে থাকা যৌনতার মিলিত শক্তির পরাক্রমে মেয়েটাকে সে শুইয়ে দিল বিছানায় এবং খুলতে শুরু করলো তাকে ঢেকে রাখা অজস্র কাপড় চোপড়ের স্তূপ।
তারপর যথারীতি ঝড় একসময় শান্ত হয়ে গেল। উপড়ে পড়া দুইটা গাছের মতো এখন তারা শুয়ে আছে। মেয়েটার চোখ মধুর ক্লান্তিতে বোঁজা আর ছেলেটা মুখ ঘুরিয়ে তাকে দেখছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ ছেলেটার মনে পড়লো ঝড়ের সময় তার পাগলামির কথা। আর সেসময় সে স্পষ্ট দেখেছে— যে মেয়েটা একদিন হাত ধরাতে তাকে যাচ্ছেতাইভাবে অপমান করেছিল, আজ সেই-ই তাকে যা খুশি তাই করতে দিয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব— এই বিরাট পরিবর্তন? যে আজ এত সহায়তা করতে পারে, সে কি সেদিন হাত ধরাটাকে সহজভাবে নিতে পারতো না? অবাক হয়ে সে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে।
ভোরের কিছু আগে হঠাৎ ছেলেটার মনে হলো, বিয়েই সেই দড়ি— যা দিয়ে একটা মেয়ের হাত পা বেঁধে তাকে নিরাপদে ধর্ষণ করা যায়।