অমিতাভ পালের গল্প ‘অ্যাপ্লায়েড ফিজিওলজির ক্লাস’

প্রকাশিত : মে ১৩, ২০২১

তার খুব ইচ্ছা ছিল তার চেয়ে বড় কোন মেয়েকে সে বিয়ে করবে। কমপক্ষে পাঁচ-সাত বছরের বড়। সেই বউ তাকে মা আর স্ত্রীর ভালোবাসা একসাথে দেবে। এবং যৌনতার সময় নিজের চেয়ে বড় কোনো মেয়েকে নগ্ন করার সুখ পাবে সে। কিন্তু বয়সে বড় মেয়েরা সব বড় বোনের মতো আচরণ করতে থাকায় সেই সাধ আর পূরণ হয়নি তার। কিন্তু ব্যাপারটা মনের মধ্যে সবসময় জীবিত থাকতো জিয়ল মাছের মতো কিংবা ফ্রিজের ভিতরের খাবারের মতো— যারা কখনো মরে না বা নষ্ট হয় না। আসলে সে তারচেয়ে কমবয়সী কোন মেয়ের সামনে নগ্ন হতে লজ্জা পায়, যেন কম বয়স ছোট ছেলেমেয়েদের মতো। প্রাপ্তবয়স্ক কেউ কি ছোট ছেলেমেয়েদের সামনে নিজের ভাবনা বা শরীর খুলে দেখাতে পারে?

তবে মেয়েদের বোধহয় এসব ব্যাপারে এক ধরনের সহজতা আছে। ওদের তো ওদের চেয়ে বড় পুরুষদের সাথেই বিয়ে হয়। আর সেইসব বিয়ের ফলে ওরা একটা সম্মিলিত পুরুষের— যার মধ্যে স্বামী, বাবা, বড় ভাইসহ সব বড় পুরুষরাই থাকে— স্বাদ পায়। বুঝতে পারে পুরুষ চরিত্রের খুঁটিনাটি। তারও ইচ্ছা করে এইভাবেই পুরা বিষয়টাকে উল্টে দিয়ে মেয়েদের চরিত্রের সব খুঁটিনাটি জেনে নিতে। তার ক্ষেত্রে অবশ্য যৌনচরিত্রের ব্যাপারটাই প্রধান। বয়সে বড় কোনো মেয়ে— যারা ছোট ছেলেদের যৌন বিষয়ক বিষয়াবলি থেকে দূরে সরিয়ে রাখে সবসময়— স্বামী বয়সে ছোট হলে তখন কি করে, সেটা জানার কৌতূহল গিজগিজ করে তার মধ্যে।

অবশ্য কেবল বড় মেয়েই না, তার আরো জানতে ইচ্ছা করে একজন চশমা পরা গুরুগম্ভীর অধ্যাপিকার যৌন আচরণ কিংবা মেয়েদের হোস্টেলের সুপারিন্টেন্ডেন্টের স্বামীর সাথে কাটানো দেহজ রাতগুলির কথা। এদের সবাইকেই যৌনতা থেকে বহু দূরে থাকা কোনো অস্পষ্ট নক্ষত্রের মতো মনে হয়, যাদের দূরবীন দিয়ে দেখলেও কোনো নগ্নতা চোখে পড়ে না। এসব কোনো মেয়েকেও যদি সে বিয়ে করতে পারতো, তাহলেই এদের যৌনতার পৃথিবীতে কৌতূহলের স্পেসশিপ নামানো সম্ভব হতো।

কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। বিয়েতো দূরের কথা, কাছে ঘেঁষার সুযোগও মিলছে না তার। এরকমই এক না-ভরা বিকেলে যে বাসায় সে থাকে, তার উল্টাদিকের বাসার একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে উঠে এলো এক অধ্যাপক দম্পতি। ভদ্রলোকের বয়স চল্লিশের এদিক সেদিক। আর ভদ্রমহিলা মনে হয় তার চেয়ে বছর পাঁচেক ছোট। ভদ্রলোককে ঠিক অধ্যাপক মনে না হলেও ভদ্রমহিলা একেবারে অধ্যাপকদের প্রোটোটাইপ। পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল, চশমা এবং দেহপরিধির বাইরে একটুও না যাওয়া এক সীমান্তে ঘেরা তার উপস্থিতির সামনে পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই মনে আসবে না কারো।

ভদ্রমহিলাকে দেখেই তার মনে হলো, এর যৌনজীবন জানতে পারলেই জানা যাবে অনেক নক্ষত্রের গঠন প্রকৃতি। সাথেসাথেই সে সিদ্ধান্ত নিল, এখন থেকে এটা জানাই হবে তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু মহিলার সাথে নিজে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হবার দৃশ্য সে অনেক চেষ্টাতেও কল্পনায় আনতে পারলো না। ব্যাপারটা ভাবতে গেলেই পড়া না পেরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যর্থ ছাত্রের ছবি ভেসে ওঠে তার চোখে এবং সে বাধ্য হয় দৃশ্যটি থেকে পালিয়ে যেতে।

শেষে অনেক ভাবনাচিন্তার পর তার মাথায় এলো সবচেয়ে সহজ সমাধান। সে ঠিক করলো, একটা বাইনোকুলার কিনবে এবং দুই অধ্যাপকের ফিজিওলজির ক্লাস উপভোগের মাধ্যমে সত্যান্বেষণে নামবে।

দুই.
বাইনোকুলার কেনা হয়ে গেছে। এখন সে প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত জাগে আর তৃষিতের মতো অধ্যাপক দম্পতির বেডরুমের জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু ভাগ্য তাকে সহায়তা করছে না মোটেও। প্রতিদিনই হয় জানালার মোটা পর্দা নামানো থাকে, নাহলে দম্পতির রাত কাটে অযৌন নিদ্রায়। ফলে জ্ঞান আহরণে তার অগ্রগতি হচ্ছে না একটুও। কেবল বাড়ছে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা।

এরকম এক ব্যর্থ অবসন্ন রাতে যখন সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, আজ থাক— ঠিক তখনি অধ্যাপক দম্পতির বেডরুমের জানালার পর্দাটা সরে গেল। দেখা গেল সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন অধ্যাপক সাহেব, সিগারেট টানছেন আকাশের দিকে তাকিয়ে। আকাশে তখন জ্বলজ্বল করছে কোনো এক পূর্ণিমার চাঁদ আর সেই চাঁদটা তাকে দেখাচ্ছেন তার পত্নী অধ্যাপিকা। চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ অধ্যাপক মহোদয় সিগারেট ফেলে জড়িয়ে ধরলেন পত্নীকে এবং চুমু খেতে খেতে সরে গেলেন বিছানার দিকে। সাথেসাথেই তৎপর হয়ে উঠলো সে এবং তার বাইনোকুলার। তারা দুজনে মিলে দেখলো অধ্যাপক দম্পতির অ্যাপ্লায়েড ফিজিওলজির ক্লাস।

ক্লাস থেকে সে শিখলো, অধ্যাপিকার খোলস ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে নিতান্তই আগ্রহী, নির্লজ্জ এবং পতির যৌনচাহিদার সহায়ক এক সাধারণ মেয়ে।