অপূর্ব চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘গ্রহ তারকারা গোল হয় কেন’

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২১, ২০২২

পৃথিবী ও চাঁদ; একটি গ্রহ, আরেকটি উপগ্রহ। দুটোই দেখতে গোলাকার। কিন্তু কেনো? সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা আর সব প্ল্যানেট বা গ্রহগুলাও গোলাকৃতি। কিন্তু কেন? সূর্য একটি তারা, সেটাও দেখতে গোল। সূর্যের মতো আরো বিলিয়ন বিলিয়ন তারা আছে, তারাও নব্বইভাগ দেখতে গোলাকৃতি। অল্প কিছু চ্যাপটা, অল্প কিছু টানেল আকৃতির তারা আছে। মোটকথা হলো, গ্রহ, উপগ্রহ, তারা— সবকিছুই গোল কেন? ব্যতিক্রম Asteroid। এগুলো বিভিন্ন আকৃতির হয়। কিন্তু কেন?

ইউনিভার্স যা দিয়ে তৈরি, তাকে সহজ করে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি ডার্ক মেটার বা অন্ধকার বস্তু, আরেকটি হলো শুধু মেটার বা বস্তু। তৃতীয়টি হলো, ডার্ক এনার্জি বা শক্তি। শুধু মেটারকে অনেকে শুধু মেটার না বলে লাইট মেটার বলে। যেসব বস্তু দেখা যায় এবং দেখা যাওয়ার কারণ তার মধ্য থেকে আলো বের হয়, অথবা আলো শোষণ করে অথবা আলোর রিফ্লেকশন হয়— তাদের একসাথে মেটার বা বস্তু বা লাইট মেটার বলে। ডার্ক মেটার ঠিক একই কারণে বলে, যার উপর আলোর কোনো প্রভাব পড়ে না। আর তাই আমরা দেখতে পাই না অন্ধকারকে।

ইউনিভার্সের ২৬% এই ডার্ক মেটার দিয়ে তৈরি, ৪% লাইট মেটার এবং বিশাল ৭০% ডার্ক এনার্জি দিয়ে তৈরি। ডার্ক মেটার এবং ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা তেমন কিছু এখনো জানে না, যা কিছু জানে তার সিংহভাগ এই লাইট মেটার বা মেটার সম্পর্কে জানে। ইউনিভার্সের এই মেটারগুলো শুরুতে মাত্র দুটো উপাদানে বিভক্ত ছিল। অধিকাংশ ছিল গ্যাস আর সাথে ধূলিকণা। গ্যাসের বেশিরভাগ হলো, হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম তৈরি হয়েছে কিছু পরমাণু দিয়ে। এই পরমাণুগুলো তৈরি হয়েছে কিছু পার্টিকেল দিয়ে। আবার পার্টিকেলগুলো কিছু সাব পার্টিকেল দিয়ে তৈরি, তাদের বলে কোয়ার্ক।

ইউনিভার্সের শুরুতে ইউনিভার্স ছিল এই কোয়ার্কের গরম সুপ। সেই কোয়ার্ক সুপ বিস্ফোরিত হলে প্রথমে তৈরি পজিট্রন ও নিউট্রন। তার চারপাশে জন্ম নিল ইলেকট্রন। তিনে মিলে তৈরি করলো পরমাণু বা এটম। তো এই গ্যাসগুলোর মেঘ একে অপরের সাথে জটলা বেঁধে তৈরি করলো স্টার বা তারা। আবার কিছু গ্যাস আর কিছু ধূলিকণার মেঘ একসাথে মিশে তৈরি করলো গ্রহ। গ্যাসগুলো যখন একটি আরেকটির সাথে মিশে একটি ঘন জায়গা তৈরি করলো, গ্যাসগুলো একে অপরকে টেনে ধরে রাখতে চাইতে গিয়ে কেন্দ্রে একটি ফোর্স বা শক্তির জন্ম দিলো। সেই শক্তি কেন্দ্রে তৈরি করলো একটি ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফোর্স। এই শক্তিটিকেই বলে গ্র্যাভিটি।

গ্র্যাভিটির কাজ কেন্দ্রের চারপাশে যা আছে তাকে নিজের দিকে টেনে ধরে রাখা। এতে কেন্দ্রে থেকে তার চারপাশে জমা হওয়া উপাদানগুলোকে গ্র্যাভিটি সমান শক্তিতে টেনে ধরে রাখে। ফলে চারপাশের বস্তুগুলো গোলাকৃতি হয়ে ওঠে। ঠিক একইভাবে গ্যাস আর ধূলিকণার সমন্বয়ে তৈরি গ্রহগুলো শুরুতে গ্যাসের কুণ্ডলি ছিল যার কেন্দ্রে তৈরি হওয়া গ্র্যাভিটি তার চারপাশে জমা হওয়া গ্যাস এবং ধুলিকণাগুলোকে সমান শক্তিতে টেনে ধরে রাখত। ধীরে ধীরে গরম গ্যাস ও ধূলিকণার পিণ্ড ঠাণ্ড হতে থাকলো। একদিকে ঠাণ্ডা সলিড গ্রহের উপাদানগুলো কেন্দ্রের গ্র্যাভিটির কারণে ভিতর দিকে টেনে থাকে, আবার গ্রহগুলোর জন্ম হয়েছে যে গ্যাসের কুণ্ডলী থেকে সেই গ্যাসগুলো শুরুতে ছিল কোনো একটি তারার আশপাশে জমা হওয়া থেকে। ফলে সেই তারার গ্রাভিটিও গ্রহের উপাদানগুলোকে তার দিকে টানতে থাকে।

যেমন পৃথিবী গ্রহটির কেন্দ্রে থাকা গ্র্যাভিটি তার প্রতিটি বস্তুকে নিজের দিকে টেনে ধরে রাখে। আবার পৃথিবীর উৎপত্তি সূর্য তারা থেকে বলে সূর্যের গ্রাভিটিও পৃথিবীর উপাদানকে টানতে চেষ্টা করে। দুই টানের কারণে পৃথিবী বা গ্রহগুলো এমন করে গোল আকৃতিতে থাকে। ঠিক একইভাবে চাঁদ পৃথিবীর কাছে থাকে বলে চাঁদকে পৃথিবী টানে, আবার চাঁদের গ্র্যাভিটি চাঁদের উপাদানকে নিজের দিকে টেনে। ফলে চাঁদও গোলাকৃতি আকার হয়ে ঘুরতে থাকে। এমন করে একদিকে পরস্পর বিপরীতমুখী গ্র্যাভিটির টান, আরেকদিকে নিজের চারপাশে নিজের অক্ষপথ এবং তারকাকে ঘিরে কক্ষপথে ঘুরতে থাকে বলে গ্রহগুলো গোল থাকে। একইভাবে তারাগুলো গ্যালাক্সির গ্রাভিটিটির টান এবং নিজের টানের পাশাপাশি অক্ষ এবং কক্ষপথে ঘুরতে থাকে বলে তারাগুলাও গোলাকৃতি হয়ে থাকে।