অপু ইব্রাহীমের দুটি কবিতা
প্রকাশিত : জুন ০৯, ২০২২
কবরের ভেতর কেউ থাকে না
জন্মেই শিশুরা কাঁদে কেন?
জন্মের আনন্দে? ছেড়ে আসার আতঙ্কে?
কিংবা জেনে যায় তারা জন্মটা মুলত মৃত্যুমুখি
তাছাড়া, মরে যাওয়াই বা এত উদ্দেশ্যহীন কেন!
এইসব সাত-পাঁচ ভাবনার মধ্যে
ট্রেনটা হঠাৎ নড়েচড়ে ওঠে হুসহুস করে,
প্ল্যাটফর্ম ছাড়বার আগে
নতুন শিশুর মতো বারকয়েক কেঁদে ওঠে হুইসেলটা
ট্রেনটা নামের মতো সেঁটে থাকে লাইনের গায়ে
নামের ভেতর ঢুকে পড়েছে শত-শত মানুষ;
মানুষগুলো মৃত্যুর দিকে মুখ করে আছে সব।
ট্রেন ছেড়ে গেলে স্টেশনটা গোরস্থান হয়ে যায়
ফাঁকা স্টেশনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কবর মনে হয়;
সবারই জানা— কবরের ভেতর কেউ থাকে না।
শ্বাস ও সংবেদ
জোহরটা আসরের দিকে গড়িয়ে রোদটাকে মিইয়ে দিলে মসজিদের মাইকগুলো বেজে ওঠে শান্ত স্বরে। ঘুম ভাঙতেই মাওলার বদলে রুমের সিলিং দেখে বুঝতে পারি না, বয়সটা বাড়ছে নাকি হাতে থাকা সময়টা কমছে। ক্রমশ এইরকম দ্বিধাবিভক্ত বিকেলে ইমামের সুনিশ্চিত স্বর কিছুটা ভাবনাহীন করে। আরাম দেয় আমারে। জলধোয়া পা-দুটো নামাজ শেষে দেহটাকে এগিয়ে দেয় বৈকালিক নদীর দিকে, যেখানে অলসতা সাপের মতো কোথায় যেন বয়ে চলে যায় ধীরে ধীরে। এমন সহজ দৃশ্যেও ভাবনারা বাঁশঝাড়ের মতো জট পাকিয়ে গুলিয়ে ফেলে— সাপ কিংবা নদীর মধ্যে কে কার ছদ্মনামে এঁকেবেঁকে চলে!
বাঁশ আর বাতাসের বাহাসে বেজে ওঠা প্রাকৃতিক বাঁশি— বৃষ্টি ও বজ্রে পাওয়া মাছের মতো গায়ে হেঁটে উজিয়ে আসে ঠোঁটের নিকটে। আয়ু থেকে ঋণ নিয়ে ফুঁ দিতেই টের পাই, বাঁশিরা মূলত নিশ্বাসঘাতক। বেহিসাবে খেলাপি হলে জীবন আমারে দেউলিয়া ঘোষণা দেবে বেঁচে থাকার কাছে। মাসুলস্বরূপ ক্রমশ মুছে দেবে হাতের মুঠোয় আঁকড়ে রাখা আয়ু-রেখাটিকে।
তবু জানি, হিসাবের ধার না ধারা বাঁশের কঙ্কালটা একমাত্র শ্যালকের মতো— আমারে খরচ করতে করতে একটানা বাজিয়ে নেবে নিজেরে।