অতনু তিয়াসের দুটি কবিতা
প্রকাশিত : আগস্ট ৩০, ২০২৪
মহাযাত্রা
ছায়ার আশ্রয় ভেঙে
প্রখর রোদের নিচে দাঁড়াও একবার
একবার আমিকে জাগাও
পরম ধনুকে তোলো প্রাণান্ত টঙ্কার...
একবার গেয়ে ওঠো গান
একবার পথে নামো ছিঁড়ে পিছুটান
বিদ্ধ হও
শূন্য হও
ঋদ্ধ হও
পূর্ণ হও
ব্যাপ্ত করো ছায়ার মিছিল
ছায়াদের কোলাহলে নামলে আঁধার
জনপদ অঘোরে ঘুমায়
মর্মের আশ্রয় হয়ে জেগে থাকে রাতের প্রহরী।
স্বপ্ন বিক্রি শেষে একদিন মধ্যরাতে ঘরে ফিরে দেখবে
তোমার ছায়া-প্রচ্ছায়া একক সত্তা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে
সারা অঙ্গে লেগে আছে উদ্ভিন্ন শান্তির আবেশ
সেই রাতে ধবধবে জ্যোৎস্নায়
ছায়ার অক্ষরে কেউ লিখবে তোমায়
আর আনন্দে উড়তে থাকবে তুমি
অমৃত আলোর দিকে...
গ্রাম্যতা
উড়ে যায় ভোকাট্টা ঘুড়ি স্মরণের সীমানা পেরিয়ে...
পুরোনো অনেক কিছু মুছে যায় সংঘাতে-সংগ্রামে
কিছু তো থাকেই নামে কি বেনামে
বায়োস্কোপের পর্দায় ভেসে ওঠা কত কত মুখ
বিস্মরণের বাঁকে হারাতে হারাতে ফিরে আসে
তুলসিবেদিতে জ্বলা প্রদীপের আলোয়
প্রসন্ন মানসীর আনত প্রণাম
উলুধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে পাড়ায় পাড়ায়...
ধ্যানস্থ সন্ধ্যায় শিমুলের সাদা চুল খুলে নিয়ে
পালায় চৈতালি হাওয়া
শিমুল ফুলের রঙিন দিনের বিরহে
বাঁশবনের মাথায় চুপচাপ বসে থাকে বিষণ্ন কোকিল
ইচ্ছে উড়িয়ে নেয় বাউলুরি
আলো-অন্ধকার হাতে তিন পায়ে হেঁটে যায় বয়সী সময়
মার্বেল খেলে রাত করে ঘরে ফেরা
আমি যেন এক মুখচোরা অবাধ্য কিশোর
সভ্যতার রাগী চোখের সামনে খালি গায়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে...
ক্ষমার অপেক্ষায়...
একবার হাসিমুখে বলে দাও পরম নিয়তি
স্বপ্নের পায়ে আর পড়বে না মোহের বাঁধন
ফিরে আসবে সুন্দর সহজিয়া মন।
আমি তুমি সে
তুমি আছ, তুমি নাই!
হ্যাঁ আর না-য়ের মাঝে হেঁটে যাই
আদি থেকে অন্তে
সৃষ্টি থেকে ধ্বংসে
আলো জ্বালাবার কথা দিয়ে
মেতে উঠি রৌদ্রহরণে।
কাকে দিই কথা?
নিজেকে?
নাকি অন্য কারোর জন্য অন্য জীবন যাপন?
ভালোয় মন্দে
আপসে দ্বন্দ্বে
বেতালে ছন্দে
জলে স্থলে অন্তরিক্ষে নিসর্গে
চরাচরে
মহাসময়ের ঢেউয়ে
নিজের ভেতর
বিস্ময়ে খুঁজে খুঁজে অস্তিত্বের খেই
মহাশক্তির কাছে সাষ্টাঙ্গে নত হয়ে
আবাহন করি তোমাকেই
নিরাকার আমাকেই!?