অজয় ভট্টাচার্যের পাঁচটি গান
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
কবি অজয় ভট্টাচার্যের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৪৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্ম ১৯০৬ সালের জুলাই মাসে বৃটিশ ভারতের ত্রিপুরার শ্যামগ্রামে। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিশেবে তার লেখা পাঁচটি গান পুনর্মুদ্রণ করা হলো:
এক.
তুমি যে গিয়াছ বকুল-বিছানো পথে,
নিয়ে গেছ হায়–
একটি কুসুম আমার কবরী হতে।
নিয়ে গেছ হিয়া কী নামে ডাকিয়া
নয়নে নয়ন দিয়া,
আমি যেন হায় ফেলে-যাওয়া মালা
কূলহারা নদী স্রোতে।।
খেলাঘরে কবে ধূলির খেলায়
দুটি হিয়া ছিল বাঁধা,
আমার বীণাটি তোমার বাঁশিটি
একসুরে ছিল সাধা।
সে খেলা ফুরালো, সে সুর মিলালো,
নিভিলো কনক আলো
দিয়ে গেছ মোরে শত পরাজয়
ফিরে এসো জয়রথে।।
দুই.
আলো-ছায়া-দোলা উতলা ফাগুনে বনবীণা বাজে
পথচারী অলি চলে যেথা কলি জাগে মধু লাজে।
মৃদু ফুলবাসে সমীর নিশাসে
অজানা আবেশ ধীরে ভেসে
আসে আজি হিয়া-মাঝে।।
দোলে লতাবেণী, সাজে বনপরী,
বাঁধে ফুলরাখী বুঝি মোরে স্মরি
চারুদিঠি তার, ডাকে অনিবার
এ শুভ লগনে আজিকে কেমনে রহি আন কাজে।।
তিন.
আলোক-আঁধার যেথা করে খেলা
ভিড়েছিল সেথা কবে মোর ভেলা।
চামেলি-সুবাস হাতে লয়ে বুঝি
ফিরেছিল বায়ু মোরে খুঁজি খুঁজি,
ছায়াপথে ছিল জ্যোছনার মেলা।।
মায়াঘেরা এক বিজন কুটিরে
কে ছিল বাঁচায়ে দীপ-শিখাটিরে।
হাতখানি তার বাঁধি ফুলডোরে
কয়েছিনু বুঝি ভুলিও না মোরে
তারে স্মরি কাঁদে বিরহের বেলা।।
চার.
চৈত্রদিনের ঝরাপাতার পথে
দিনগুলি মোর কোথায় গেল
বেলা শেষের শেষ আলোকের রথে।
নিয়ে গেল কতই আলো কতই ছায়া
নিল কানে-কানে-ডাকা নামের মনে-মনে-রাখা মায়া,
নিয়ে গেল বসন্ত সে আমার ভাঙা কুঞ্জশাখা হতে।।
দূরে দূরে কোথায় আমার স্বপনখানি
কয়ে বেড়ায়, এই তো আমি, প্রাণে প্রাণে চিরদিনের জানাজানি।
কোথায় আমার নয়ন আলো
কোন প্রদীপের আলোর সনে কেমন করে সে মিলালো।
আবার সে কোন্ সুদূর বিপুল নভে
অস্তপারের দিনগুলি মোর নূতন উষার আলো হয়ে রবে—
আমায় ওরা চিনবে না গো, চিনবে না আর আমি কোনোমতে।।
পাঁচ.
মম মন্দিরে এলে কে তুমি?
তব পূজা-ধূমে লুকায়ে আজি
আমারে পূজিলে ওগো কে তুমি?
প্রেম-দেবতার আরতি লাগি
আঁখি-দীপ তব রয়েছে জাগি
মোরে দিলে মালা ভুলে কে তুমি?
অন্ধ বাতাস হেথা নিশাসে,
পাষাণ দেবতা আমি যে আজ
শত বেদনার হিম-পরশে।
ওগো পূজারিণী যাও গো ফিরে
পাষাণ গলে না এ-আঁখিনীরে
মরুতে মলয় চাহ কে তুমি?