মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়ের ৩ কবিতা

প্রকাশিত : অক্টোবর ৩১, ২০২৪

অ্যাম্বুলেন্স

অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে, এখনি তিনি উঠবেন।
ড্রাইভারের চোখ-মুখ দাড়িতে হতাশায় মালুম,
অ্যাম্বুলেন্সের
আরোহী উঠবেন না, তাকে ওঠানো হবে। আরও।
সকাল। রজতাভ শামস- জোছনায় হেমন্তের ছাতিমগন্ধ মেশে।
তার নিথর দেহকে গাড়িতে তোলা হলো,
ড্রাইভারের নাকে রুমাল,যদিও মৃতদেহের পচন ঠেকাতে...
তবু অভ্যেস তার,
আর বিরক্তি তার মালিকের প্রতি,
লাশবাহী শকটেই তো যাওয়া ভালো মুর্দার!
গাড়ি চলে গেল।
একটি কিশোর মেহগনি গাছ দীপ্যমান।
হাসপাতালে ডিউটিরত নার্স ঢোকার পথে, রোজ যেমন,
আজও ঝরাফুল কুড়োচ্ছে।
হাতের তালুতে নিয়ে  তাকিয়ে থাকে ফুলপানে।
ঝরা মৃত ফুলটি প্রাণ পায় এর ফলে,
নারীর স্পর্শ ও অবলোকন  তো আসলে মৃত-সঞ্জীবনী।
ইস! ক্ষণিক আগে এলে তো
তার শমসের-ছোঁয়ায় মৃত  আসাদ প্রাণ পেয়ে  হাত তুলে  বলতো, আজাদ!
আসলে অবুঝ ড্রাইভার মৃত সঞ্জীবনীর কী বোঝে?

অবিস্মরণীয়

মনে আছে জীবনে প্রথমবার সিগারেট-মন্থনের ক্ষণটি,
রববার, ধনুরাশি, কন্যালগ্ন,
আর্দ্রা নক্ষত্র,
কিম্বা বুধ, সিংহ, শ্রবণা।
মনে নেই।
মনে আছে খালি, শ্রবণার সঙ্গে বেট, দিনদুপুরে সতেরোর দামাল কিশোর আমি
প্রকাশ্য রাস্তায়  ধূমপান করলে সে আমার প্রপোজাল বিবেচনা করবে।
বিজন সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে
হাতে ফিলটারটিপড ফোর স্কোয়ার,
সে-মুহূর্তে কিং সাইজ সিগারেটটিকে লাগছিল বিষ্ণুর বামন অবতার, আর বিজন সেতুটিকে
হ্রস্ব, যেন আধ-খাওয়া বিড়ি!

প্রথম  চুমু- খাওয়ার মধ্যরাত,
মেয়েটি নীরার বোন স্বাতী, কাপ্রিবসনা,
সেইদিনই আলাপ। তার স্বাদ
পূর্ণকুম্ভ থেকে ছলকে পড়া প্রয়াগ-নাসিক- হরদ্বার না,
ছিল উজ্জয়িনীর কর্ণিকার ফুল। সে অমৃত, তদুপরি তন্মাত্রের ককটেল!
মহাকালের মন্দির সাক্ষী। অবুঝ ও তেজস্ক্রিয়।
প্রথম  মাসে চাকরির মাইনে হাতে ও মর্মে  পেয়ে মনে হলো,
আমাকে দেখে অতঃপর লজ্জা পাবে কুবের।
দয়িতার সঙ্গে প্রথম সঙ্গমেচ্ছা!
আলেপ্পির আলপনা, ঝুমকোলতার বর্ণিকা ভঙ্গ,
আইফেল  টাওয়ারের  চূড়ায় স্থাপিত স্যমন্তকমণি,

আর মিয়া তানসেনের বন্দিশ শুনে বৃন্দাবনের মন্দির  যেমন হেলে আছে
তাই। তাছাড়া নিজেই পিসার টাওয়ার, হিলে!
আর অবিরাম হৃদে ঝানানা না বাজছে। বাজে।

তা ধিন তা ধিন তা বাদ দিন

তারা নাকি একটি দেশই ছিল,
তারপর নানান দেশের বণিক ব্যবসা করতে এসে
একটি দল বেজায় মুনাফা লুটে দেশটাকে প্রায় লাটে তোলে
আর তাইতে দেশটি ত্রুটিহীন দুটি দেশ হয়ে গেল,
তিমিরান্তিক তিমিমাছের কাঁটাতার-ঘেরা!
মোহেনজোদারো নানকান শরিফ,
আজমির কাশ্মীর দুভাগে!
নাকি স্বাধীন! নাচো তা ধিন!

তারা নাকি দুটি -কুসুম একদেশ  ছিল
তারপর সেই মোক্ষম মুনাফা লুটেরা
বহু মন্বন্তর দেয়, ফাঁসি দেয়, দ্বীপান্তর।
আর তাইতে? কাঁটাতার কমন,
বোনাস নদী নিয়ে সুয়োরানি-দুয়োরানি,
ইলিশ নিয়ে অভিমান-তকরার,
রামপ্রসাদে-লালনে তেরো হাঁড়ি,
বদনা-কমণ্ডলুর গেণ্ডুয়া খেলা।
শ্লা চলছে তো চলছেই,অবিরাম পাউরুটি  ভক্ষণ!

নাকি স্বাধীন! তা ধিন। আরে বাদ দিন।